সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মোঃ রফিকুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ।।
বরিশালের বাবুগঞ্জ প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ, খেজুরের রস ও খেজুর গুড়ের পাটালি। একটা সময় শীত আসলেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন গাছিরা। কালের পরিক্রমায় খেজুর গাছ হারিয়ে যাওয়ায় এখন আর গাছিদের তেমন গাছ কাটতে দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে বুধবার বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের গাছি মোঃ পারভেজ মৃধা কে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য গাছ কেটে হাড়ি পাততে দেখা গেছে।
উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোতালেব হোসেন, আলমগীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, কয়েক বছর আগে দেশে নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে আতঙ্কে অনেকে খেজুরের রস খাওয়া ছেড়ে দেন। সেই সুযোগে ইটভাটা মালিকদের দৌরাত্ম্যে দেদারসে খেজুরগাছ কেটে বিক্রি করতে থাকেন লোকজন। তাছাড়া প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে খেজুরসহ অন্যান্য গাছ কেটে ফেলছেন।আগে বিকাল হতেই গাছে গাছে হাঁড়ি বসানো, সকালে রস সংগ্রহ করা, সংগৃহীত রস দিয়ে গুড় তৈরি করা অথবা বাঁকে করে হাঁড়ি ভর্তি রস বাজারে নিয়ে যেতেন গাছিরা।খেজুরের গুড় আর পাটালির ম ম গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াতো। অনেকে হাঁড়ি ভর্তি রস স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। কালের বিবর্তনে এসব এখন ইতিহাস হওয়ার পথে। হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরগাছ। সেই সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছেন খেজুরগাছ কাটার কারিগর গাছিরা।
চাঁদপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের মোঃ রশিদ হাওলাদার বলেন, এখন খেজুর গাছ খুব একটা দেখা যায় না। অথচ আগে শীত এলে তাদের রমরমা সময় কাটত। তারপরও যতটুকু রয়েছে তার মধ্যেই কিছু লোক পুরনো পেশা ধরে রেখেছেন।
উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের গাছি মোঃ পারভেজ মৃধা জানান, ইতিমধ্যে গাছ প্রস্তুত করে রস সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত গাছে রস আসা শুরু হয়নি। তিনি ৩০/৪০ টি গাছ কাটেন। একবার গাছ ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। পরবর্তীতে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সংগ্রহের পর হাঁড়ি পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। এতে সংগৃহীত রসের গুণগত মান ঠিক থাকে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে কোমরে রশি (দড়ি) বেঁধে গাছে ঝুলে তাদের রস সংগ্রহ করতে হয়। এ কাজে অনেক পরিশ্রম। এ বিষয়ে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতের দিয়া গ্রামের মুজাফফর আলী বলেন, বর্তমানে তেমন খেজুর গাছ দেখা যাচ্ছে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি খেজুরগাছ লাগানো এবং তার যত্ন নেওয়া।
বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দীন বলেন, খেজুরের গাছ রোপণে লোকজনের মধ্যে তেমন আগ্রহ না থাকায় খেজুরের রস হারিয়ে যাচ্ছে। তবে সব ধরনের গাছের চারা রোপন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।